সর্বপ্রথম যখন ২য় জানাযার ঘটনা ঘটে ইসলামের ইতিহাসে..জানুন প্রকৃত ইতিহাস

মসজিদে নববী ঝাড়ু দিতেন এক মহিলা। তিনি এসেছিলেন আবিসিনিয়া (এখনকার ইথিওপিয়া) থেকে। আয়েশা (রা:) প্রতিদিনই তাকে দেখতে পেতেন। প্রতিদিনই তার পাশে বসতেন। আর শুনতে পেতেন ছড়ার মতন কয়েকটা লাইন তিনি নিয়মিত পড়ছেন –

স্কার্ফের সেই দিনটি ছিল আমার প্রভুর এক বিস্ময়কর নিদর্শন। সেদিন তিনি আমাকে বাঁচিয়েছিলেন অবিশ্বাসের অন্ধকার থেকে।

প্রতিদিন এই একি আবৃত্তি শুনতে পেয়ে আয়েশা (রা:) একদিন এর কারণ জানতে চাইলেন । তিনি বললেন-

আমি ছিলাম একজন আবিসিনিয়ান ক্রীতদাসী, কুচকুচে কাল বর্ণের খুবই হালকা পাতলা গড়নের কৃষ্ণাঙ্গ একটা ছোট্ট মেয়ে। একটা বেদুইন আরব গোত্রে আমি ছিলাম এক আবদ্ধ দাসী। আমার কোন বন্ধু ছিল না। ছিল না কোন পারিবারিক বন্ধন। আমি শুধু মনিবের পরিবারের কাজ করতাম। আর তাদের সাথে সাথে ঘুরতাম এক জনপদ থেকে আরেক জনপদে। একদিন আমার মনিবের মেয়ে ঘর ছেড়ে বাইরে এলো। তার গলায় একটা স্কার্ফ ছিল। এটাকে বলে ‘উইশা’। উইশা হচ্ছে লাল রংয়ের চামড়ার একটা শাল যেটা গলায় বা কোমড়ে পেঁচিয়ে পরিধান করা যায়। ওটাতে স্বর্ণ মুদ্রা সহ আরও মূল্যবান পাথর খচিত। সে ঐ মূল্যবান স্কার্ফটা মাথার কাছে রেখে ঘুমিয়ে পড়ল। আর তখনি উপর থেকে লাল বর্ণ হওয়ায় মাংস পিন্ড ভেবে বড় একটা পাখি ছোঁ মেরে ওটা নিয়ে গেল।

“ঘুম ভাঙার পর প্রিয় স্কার্ফটা না পেয়ে আমি চিৎকার করে কান্না জুড়ে দিলাম এবং তার বাবার কাছে বিচার দি্লাম যে, ঘুমন্ত অবস্হায় কেউ এটা চুরি করেছে। স্বভাবতই চাকরাণী হিসেবে সবার সন্দেহের চোখ আমার দিকে। আমি বললাম মাংস পিন্ড ভেবে একটা পাখি ছোঁ মেরে ওটা নিয়ে গেছে। তারা আমার কথা বিশ্বাস করল না। তাদের ধারণা ছিল আমি ওটা চুরি করে লুকিয়ে রেখেছি।”

আমার কোন কথাই তারা বিশ্বাস করলো না। মারতে আরম্ভ করলো। চাবুকের আঘাতে আমার ছোট্ট পুরোটা দেহ রক্তাক্ত হয়ে গেল। আমি একটা শীর্ণকায় ছোট্ট মেয়ে ব্যথায় চিৎকার করে কাঁদছি। কেউ একজন এগিয়ে এলো না আমার পাশে। শরীরের বিভিন্ন জায়গা চাবুকের আঘাতে কেটে রক্ত বেরিয়ে মরুভূমি বালির মতো লাল হয়ে গেল। পুরোটা শরীর চাবুকের আঘাতে জখম। আমি তখন অসহ্য চিৎকারে আকাশের দিকে চেয়ে কাঁদছি। ঠিক তখনি পাখিটা নেমে এল। স্কার্ফটা ফেলে দিয়ে গেল আমার আর মনিবের মাঝখানে।

চাবুক থেমে গেল । ভুল বুঝতে পেরে প্রচন্ড অনুশোচনায় মনিব আমায় দাসত্ব থেকে মুক্তি দিয়ে দিল।

আমি তখন মুক্ত স্বাধীন। শুনতে পেলাম মদীনাতে একজন সত্যের দিকে মানুষকে ডাকছেন। এবং বেশীর ভাগ অনুসারী দরিদ্র, দূর্বল, ক্রীতদাস আর নির্যাতিত পিছিয়ে থাকা সব সাধারণ মানুষ।

আমি ছুটলাম মদীনার পথে। অনেক লম্বা মরুভূমির পথ পেড়িয়ে পৌঁলালাম। চাবুকের আঘাত তখনও শুকায়নি। ছিন্ন বস্ত্র, শীর্ণ, ক্ষুধার্ত, কালো সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত এক খুব অসহায় ক্রীতদাসীকে চিনে নিতে কষ্ট হয়নি সে মহামানবের। আমি ঘোষণা দিলাম ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ।’

আর মসজিদে নববীর ভিতরেই নবীজী এই অসহায়ের থাকার ব্যবস্হা করে দিলেন।

এটাই ইসলাম। ইনিই মুহম্মদ (সা:)।

এই মহিলা সাহাবীর নাম উম্মে মাহজান। তিনি মসজিদে নববী ঝাড়ু দিতেন। নবীজী নিয়মিত তাঁর খোঁজ খবর রাখতেন। একদিন সারাদিনেও না দেখতে পেয়ে নবীজী (সা) জানতে চাইলে সাহাবারা জানালেন অসুস্হ হয়ে আগের রাতে মারা গেছেন। রাত বেশী হওয়ায় নবীজীকে ঘুম থেকে ডাকতে চায়নি কেউ। রাতেই দাফন দিলেন তাঁকে।

এটা জেনে নবীজী খুব কষ্ট পেলেন। তখনি তাঁর কবরে গিয়ে বাকি সাহাবীদের নিয়ে আবার জানাযা পড়লেন।

দ্বিতীয় জানাযা ইসলামে এটাই প্রথম, একজন কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসের।

Share this post on..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *